১০
স্বপ্ন
১ ঃ ভ্যানোপ্রসাদ ঃ
“I love dreams, even when they're nightmares, which
is usually the case. My dreams are full of the same obstacles, but it doesn't
matter”
নাকি তখন
আমাদের মিউজিক ক্লাস হবে। আমি একা একা একটা
সিঁড়ি দিয়ে উঠে উঠে যাচ্ছি যাচ্ছি... রাজেশ্বরী অদিতি আহেলী কেউ তো নেই। তারপর মনে হোলো মিউজিক রুম তো দোতলায়... আমি তো অনেকদূর উঠে এসেছি... জানলা
দিয়ে দূরের একটা হাট্টিমাটিম গাছের মাথা দেখা যাচ্ছে। সিঁড়িটা শেষ হয়ে আসছে এবার। একটা ঘর আছে মনে হয়। আচ্ছা ভালো কথা। তারপর আমি দেখলাম কি
সিঁড়ির শেষে একটা বড়ো ঘর... তারপর আর কিছু নেই কিন্তু। ছাদ। ঘরটায় গিয়ে দেখি অন্য অন্য বাচ্চা
অন্য অন্য ম্যাম... আমি তো কাউকেই চিনি না এদের... আমি কোথায় চলে এলাম? দেখি ঘরের
মেঝেটা সাদা আর কালো খোপ খোপ... একটা সাদা আর একটা কালো... একটা সাদা আর একটা
কালো... স্কোয়্যার স্কোয়্যার... অগি আছে না অগি... ওই যে বেড়াল অগি... টিভিতে
দ্যাখায় ফোর জিরো থ্রি মানে সি এন চ্যানেলে ... ওই অগির ঘরের মেঝের মতো মেঝে
একদম... চেসবোর্ডের মতো... আর আর... ঘরে একটা নীল রঙের ফ্রিজ আছে... নীঈঈঈল
রঙের... এখন কি বিকেলব্যালা? এখন আমার স্কুল ক্যানো?
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমরা ঃ কবিতা থেকে আপনি যখন ফিল্মে
এলেন, দ্যাখা গ্যালো ফিল্মেও আপনার কবিতার একটা জার্নি শুরু হোলো যেটা অন্য কারো
মধ্যে দ্যাখা যায়নি, আপনিই বলতে গেলে এটা শুরু করেন, এটা নিয়ে আপনি নিজে কী বলবেন?
চলচ্চিত্রের কাব্যভাষা কীভাবে নির্মিত হয় বলে আপনি মনে করেন?
উনি ঃ দ্যাখো, এটার কোনোকিছুই কিন্তু
আমি ভেবেচিন্তে করিনি। আমি এমন করব,
কোন পরিকল্পনা আমার মাথায় ছিল না। আমি পরিকল্পনা এ কারণেই বলছি যে এই জিনিসগুলো পরিকল্পনা করে হয় কিনা আমার আদৌ
জানা নেই। বোধহয়, আমার ধারণা,
হয় না। তবে, কবিতার ভেতর যা
আমি খুঁজতাম সে সময়ে, তা হোলো ইমেজ। মানে, দু ধরনের তো কবিতা আছে, তা, বর্ণনামূলক কবিতা বাদ দিয়ে অন্য যে ধরনের
কবিতা, সেখানে আমি নানারকম ইমেজ খুঁজে পেতাম। সেগুলো কিন্তু আমাকে মোহগ্রস্থ করে রাখত। পরে যখন ফিল্ম করার কথা ভাবলাম, তখনো ওইগুলো কাজ করেছে আর কী, ফলে ওইভাবেই
হয়েছে। কেউ কখনো আমাকে বলেন
নি, এইভাবে করো, আর আমিও কখনো পরিকল্পনা করে কিছু করিনি।
আমরা ঃ কখনো আপনার এমন ইচ্ছে হয়নি যে একটি সম্পূর্ণ কবিতা, ধরুন আপনার নিজেরই
কোন কবিতা, তাকে অবলম্বন করে ছবি করতে ?
উনি ঃ তেমন ইচ্ছে তো হয়েছে, কিন্তু করা
হয়নি। কিন্তু কবিতার, আমার
নিজের কবিতার অনেক অনুষঙ্গ, অনেক ইমেজ এসেছে, বারবার ফিরে এসেছে আমার ফিল্মে। এটা উদাহরণ দিয়ে ঠিক বোঝানো যাবে না। মানে এই কবিতার ঠিক ওই জায়গাটা এই ফিল্মের ওইটুকুতে ব্যবহার হয়েছে, ঠিক এরকম
না। তবে, ধরো, বেড়াল নিয়ে
আমি অনেক কবিতা লিখেছি, আমার কোনো কোনো ছবিতে বেড়াল এসেছে বারবার। আর একটা জিনিস, কিছু অনুষঙ্গ বারবার এসেছে। যখন কবিতা লিখতে শুরু করি তখন একটা জিনিস, এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি, আমায় খুব
ইন্সপায়ার করতো। আমার কবিতাতেও
কিন্তু এসেছে, স্বপ্ন, ম্যাজিক, এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি- র ব্যাপারগুলো, বারবার। ছবিতেও বারবার আসে।
আমরা ঃ আপনার অনেক ছবি দেখতে দেখতে অনেক সময় বুনুয়েল-এর কথা মনে পড়ে। অ্যাবসার্ডিটির প্রয়োগ ইত্যাদি... এ নিয়ে যদি কিছু বলেন...
উনি ঃ আমি তো বলবো আমার ভীষণ প্রিয়
ফিল্মমেকার, সত্যিকারের প্রিয় ফিল্মমেকার, অবশ্যই হলেন বুনুয়েল। ওঁর কাজকে আমি সবথেকে বেশী শ্রদ্ধা করি। এছাড়া তারকোভস্কি আছেন। আরো কেউ কেউ
আছেন। তোমরা জানো, যখন
কুড়ির দশকে দাদায়িস্ট মুভমেন্ট শুরু হোলো, বুনুয়েল-দালি-অ্যাপোলোনীয়র এঁরা সবাই
যুক্ত ছিলেন। ভেঙ্গে গ্যালো। তারপর এঁরা সবাই আবার একসাথে হলেন সুররিয়ালিস্ট মুভমেন্টের সময়। অবশ্য বুনুয়েল কখনোই সুররিয়ালিজমকে সেভাবে ব্যবহার করেননি। উনি যেটা করেছেন, বারবার বাস্তবকে এক্সটেন্ড করেছেন। যেমন ধরো, তুমি যদি দালির ছবি দ্যাখো, বোঝাই যায় যে এটা বাস্তব নয়। কিন্তু বুনুয়েলের ছবি দেখলে বুঝে যাও যে এটা বাস্তব কিন্তু ঠিক বাস্তব না,
আরও যেন কিছু আছে। ওটাই আমি
করছি, করেছি আমার প্রায় সব ছবিতেই। বারবার ওটাই বেরিয়ে আসে। এগুলো কিন্তু
কোনোটাই ওরকম সাজিয়ে হবেনা। যেমন কবিতা
যদি ভেতর থেকে তৈরী না হয়, মানে শব্দের পর শব্দ সাজালেই তো আর কবিতা হয়না, তেমন আর
কী। আমি নাম করবোনা,
কিন্তু আমার সমসাময়িক অনেকেই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ওই বাস্তবকে দু-দিক থেকে টানা,
ওই এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি... না। পারেন নি। আসলে এটা শুধু
মেধার ব্যাপার নয়। অনেক কিছু
জড়িয়ে আছে। দ্যাখো, সিনেমায়
অসুবিধেটা হচ্ছে, সেখানে ভিস্যুয়ালটাই দ্যাখানো হয়। তুমি যেটা ভাবলে সেটা হয়তো দ্যাখাতেই পারলে না যদি না তোমার ক্যামেরা
সম্বন্ধে এবং ক্যামেরার ব্যবহার সম্বন্ধে, লেন্স সম্বন্ধে, আলো,
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পোজিশন... এরকম অনেক খুঁটিনাটি টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো
সম্বন্ধে একটা ভীষণ ভালো ধারণা না থাকে। ইউ হ্যাভ টু বি আ মাস্টার। আবার...
ধরো... অনেকে নতুন কিছু করতে, এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পান। আসলে কম্যুনিকেট করতে জানতে হবে তোমাকে। তোমাকে জানতে হবে যে গাছ কথা বলে তোমার সাথে, তোমাকে জানতে হবে যে পাথর কথা
বলে তোমার সাথে, তোমাকে জানতে হবে যে রাস্তা কথা বলে তোমার সাথে...
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই বাচ্চারা
কারা? এই ম্যাম দুজন কারা? আমি তো কাউকে চিনি না। বাচ্চারাও মনে হোলো আমায় কেউ চেনে না... সবাই কালো কোট পরে আছে... আর তাতে
হলুদ ব্যাজ। কিন্তু আমার তো স্কুলের ড্রেস। ম্যামরা পিঙ্ক কোট। একজন ম্যাম আমায়
চিনতে পারলো... বললো, এসো বৈভবী, ইউ আর লেট। মনে হোলো আমাকেই বললো কিন্তু অন্য একজন আমার পাশ দিয়ে চলে গ্যালো। এ কোথা থেকে এলো? আমি তো একা একাই সিঁড়ি দিয়ে... তারপর দেখি সব বাচ্চারা ওই
অগির মেঝের মতো মেঝেতে হামাগুড়ি দিচ্ছে কালো কোট পরে... সবাই হামাগুড়ি দিচ্ছে...
তার মধ্যে একটা বাচ্চা আমার খুব চেনা চেনা মনে হোলো... সে হাসলো আমায় দেখে। আর কেউ আমায় দেখতে পাচ্ছে না। ম্যামদের হাতে একটা
সাদা স্টিক। সব বাচ্চা ভয় পাচ্ছে। ওই বাচ্চাটা আমায় দেখে হাসলো ক্যানো? ওই বাচ্চাটা আমার অতো চেনা চেনা ক্যানো?
আমার হঠাৎ মনে হোলো আমার
পেন্সিল-ইরেজার-কালার বক্স-শার্পনার সব সব হারিয়ে গেছে... এই মিউজিক ক্লাসে আসার
আগে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি... আমার ভয় লাগছিলো... আমার ঘাম হচ্ছিলো... তারপর ওই
বাচ্চাটাকে আমি চিনতে পারলাম... একদম আমার মতো দেখতে... ওকেই ম্যাম ডেকেছিলো? ও-ই
বৈভবী? আমার খুব ভয় লাগছিলো... আমি চিৎকার করছিলাম...
স্বপ্ন
২ ঃ আমি ঃ
“'Don't worry if the movie's too
short', I once told a Mexican producer. 'I'll just put in a dream.' He was not
impressed”
অলোককাকুদের বাড়ির পিছনের দিকের পাঁচিল। য্যানো আরও একটু লম্বা হয়ে গ্যাছে এই বিকেলে। আরও একটু উঁচু। ক্যামোন একটা পুজো
পুজো। একটা দীর্ঘ সাদা ফ্রকে জুহি চাওলা। ‘কিন্তু,’ আমি বললাম,’আমি তো কুমড়োর তরকারী খাইনা... মানে খেতে পারিনা কখনোই... আপনি... খান
দেখছি।‘ জুহি চাওলা হাসলেন। সেই অতিপরিচিত বিখ্যাত হাসিটি। আর স্পষ্ট বাংলায়
বল্লেন,’খাও... ভালোই লাগছে তো...”। আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে আসছিলো। কাছাকাছিই কোথাও আবছা
“মেরা দিল ভি কিতনা পাগল হ্যায়...”আমি প্রায় চিৎকার করে উঠলাম ‘এতো আপনার সিনেমার
গান নয়... এতো মাধুরী দীক্ষিতের সিনেমা...’ জুহি চাওলা একটু
কি বিরক্ত হলেন? ভ্রূ কুঁচকে বললেন, ‘তো কী হয়েছে? তুমি তো
ঋষি চাটুজ্জের সাথে বকখালি ব্যাড়াতে যাওয়ার সময় শুভঙ্কর দাশের কবিতার বই সঙ্গে করে
নিয়ে যেতে চেয়েছিলে! মনে নেই বুঝি? চুপ করে খাও দেখি। এখন আর কথা বাড়িও না।’ পাঁচিলের মাঝেমাঝে
কিছুদূর পরপর এক একটা জায়গা বেশ চওড়া মতো। সেখানে একটাই শালপাতার থালায় ভাত। ছোলা দেওয়া
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমরা ঃ কবিতা আর সিনেমা, এদের উভমুখিনতা নিয়ে কিছু বলুন।
উনি ঃ আমি একজন কবির কথা বলবো। মায়াকভস্কি। উনি সিনেমার
ব্যাপারে খুব প্যাশনেট ছিলেন। সিনেমা
করেওছেন। হয়তো আরো করতেন। সিনেমার ওপর ওঁর কিছু লেখাও আছে। তুমি পাসোলিনির কথা ভাবো। একজন কবি। আমি ওঁর লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদও করেছি। শিল্প সম্বন্ধে ওঁর ধারণাগুলো একদম অন্যরকম ছিলো। তারকোভস্কি কবি ছিলেন না বটে কিন্তু ওঁর সিনেমা ভীষণ কাব্যিক। তারপর ধরো বুনুয়েল। নিজে কবিতা
লেখেননি কিন্তু যাঁদের সঙ্গে উনি বেড়ে উঠেছিলেন তাঁরা কবি। আমার মনে হয়, আসলে, জীবনযাপনটাও শিল্পের ওপর একটা ছাপ ফ্যালে। কবিতা থেকে পেইন্টিং বা সিনেমা... আবার পেইন্টিং থেকে কবিতা বা সিনেমা...
এইসব যাতায়াতগুলো চলতেই থাকে সবসময়... সিনেমা থেকেও অনেক কবিতার এলিমেন্টস পাই। কবিতায় সেসব মিশে যায়। এইসব
আদানপ্রদান আর কী... হতেই থাকে নানাভাবে...
আমরা ঃ সিনেমা যে ক্রমে ক্রমে ন্যারেটিভ-এর দখলে চলে গ্যালো, এটা কি আপনার
কাছে একটু দুঃখজনক মনে হয় না? ন্যারেটিভ-এর বৈচিত্র্য নিয়ে, তার ভূমিকা নিয়ে যদি
সংক্ষেপে কিছু বলেন...
উনি ঃ না, দ্যাখো, আমি ন্যারেটিভ-এর দোষ
দিইনা। ওটাও একটা ফর্ম, একটা
স্ট্রাকচার। তুমি আমাদের
ভারতবর্ষের এপিকগুলোর কাছে চলে যাও। মহাভারত দ্যাখো, রামায়ণ দ্যাখো। আমাদের এপিকগুলোয়, পেইন্টিং-এ কীভাবে বাস্তবের সাথে ওই আনরিয়েল এলিমেন্টসগুলো
মিশে থাকে... এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি তো আছেই। কাজেই এই যে সিনেমার মধ্যে কবিতাকে খোঁজা, সিনেমার কবিতা হয়ে ওঠা, এগুলো
আমাদের একদম ভারতবর্ষীয় ব্যাপার। আর ন্যারেটিভ, দ্যাখো, ছোটবেলায় গল্প শুনতে আমরা সবাই ভালোবাসি। ন্যারেটিভ তুমি করতেই পারো, ভাবো ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’ সিনেমাটার কথা। গল্পই তো, কিন্তু কিসের গল্প? একটা গাড়ির সঙ্গে একটা লোকের সম্পর্কের গল্প। কিন্তু শুধু ন্যারেটিভ নিয়ে পড়ে থাকলে তো সেটা দুঃখজনক। দ্যাখো, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক... এঁরা খুবই বড়োমাপের পরিচালক। কিন্তু, ওই ন্যারেটিভকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। এঁরা কেউই ওই বাস্তবকে দুদিক থেকে টানা... ব্যাপারটা করেননি। বাস্তবকে বাস্তব হিসেবেই মেনে নিয়েছেন।
আমার মনে আছে, একবার আড্ডা হচ্ছে,
সত্যজিত বাবু আছেন, সমর সেন আছেন, আমি তখন ছোট, শুনছি চুপ করে... সত্যজিৎ বাবু
গোদারের ছবি নিয়ে হাসাহাসি করছেন! মানে গোদারের ফিল্মমেকিং-এর স্ট্রাকচার যে একটা
টেকনিক, একটা ধারা, সেটা উনি মানতেই চাইতেন না। মানে, দ্যাখো, সত্যজিৎ রায় কিন্তু আদ্যোপান্ত একজন গল্প-বলিয়ে। হ্যাঁ, অসামান্য একজন গল্প-বলিয়ে, অসাধারণ সব ছবি করেছেন, কিন্তু,
আল্টিমেটলি, একজন গল্প-বলিয়ে। কি মুশকিল!
তোমার গোদার ভালো লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে... সেটা অন্য প্রশ্ন। কিন্তু তুমি স্ট্রাকচারটাকে অস্বীকার করবে কি করে? আরে, ওটাও তো একটা ভঙ্গি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কুমড়োর তরকারী মাখা। আমি আর জুহি চাওলা
মুখোমুখি বসে প্রায় নীরবে খেয়ে যাচ্ছি। খেতে খেতে জুহি একবার
একটু নড়েচড়ে বসলেন। ডান পা টা তুলে নিলেন পাঁচিলের
ওপর। হ্যাঁ, হাঁটুমুড়ে। ফ্রকটা সরে গিয়ে অনেকখানি বেরিয়ে পড়েছে ধবধবে ফরসা ঊরু। সেদিকে খেয়ালই নেই কোনো... একমনে খেয়ে যাচ্ছেন। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কাগজে বা টিভিতে বরং
অনেক মন দিয়ে দ্যাখা যায়... কিন্তু সামনাসামনি... একদম কাছ থেকে... নাহ।
ঠিক তার পরেই দৃশ্যটা বদলে গ্যালো। দেখলাম অলোককাকুদের
বাড়ির সামনের রাস্তাটা... জলভর্তি... একটা-দুটো সাপ জলের তলায় এদিকওদিক শুয়ে আছে
কুন্ডলী পাকিয়ে। আমি খুব উত্তেজিতভাবে তার মধ্যেই
পায়চারী করছি। কানে ফোন। ‘না না একী... আপনারা এখনো টাকাটা দিলেন
না... প্রায় দুবছর হয়ে গ্যালো... বলেছিলেন সামনের মাসেই দিয়ে দেবেন... আমার এখন
টাকার দরকার... আমি কবে থেকে ভেবে রেখেছি আপনাদের কাছ থেকে পাওনা টাকাটা পেলে আমি
একটা ল্যাপটপ কিনবো... আমার ল্যাপটপ আট বছরের পুরনো... তাছাড়া সামনের বইমেলায় আমার
একটা কবিতার বই বের হওয়ার কথা...’। একটু পরে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি... শীত শীত করে আমার... এতক্ষণে খেয়াল হয় জুহি
চাওলার কথা... আর দেখতে পাচ্ছিলাম না ওনাকে... আবার একটা অন্যরকম রাস্তা... আমি
দৌড়তে থাকি একই জায়গায়... বুঝতে পারি সাড়ে আটটা বাজে... অফিসে লেট হয়ে যাবে আজও...
রাস্তাটা হঠাৎ ফুলে উঠতে থাকে...
(প্রথম পর্ব এখানেই শেষ, সাময়িক বিরতি, আবার দ্বিতীয় পর্ব তারপর)
কৃতজ্ঞতা ও তথ্যসূত্র ঃ
১) ধীমান চক্রবর্তী
২) স্বদেশ সেন
৩) জাঁ লুক গোদার
৪) আর্যনীল মুখোপাধ্যায়
৫) তারাপদ রায়
৬) লুই বুনুয়েল
এঁদের কবিতা / কবিতাংশ / বক্তব্য ব্যবহার করেছি বাঁকা ও সাধারণত bold হরফে। এছাড়া কৌরব পত্রিকার জন্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের দেওয়া সাক্ষাৎকারের অংশ ব্যবহার করেছি। দেবমাল্য গুহ তাঁর তোলা ফোটোগ্রাফ ব্যবহার করতে দিয়েছেন। অতনু সিংহ নির্মিত সিনেমার নাম এবং বারীন ঘোষাল, কমল চক্রবর্তী, সুবিমল
মিশ্র, শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – এঁদের লেখা উপন্যাসের নাম ব্যবহার করেছি। সংগ্রহে থাকা চিঠিপত্র দিয়ে বিশেষ সাহায্য করেছেন দুজন পরিচিত। লেখা চলাকালীন সরাসরি নানারকম পরামর্শ, আলোচনা ও উৎসাহের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই অনুপম মুখোপাধ্যায়, দোলনচাঁপা চক্রবর্তী,
শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় ও আর্যনীল মুখোপাধ্যায়-কে।