70Th pOsT : দ্বিতীয় পর্ব



বিদিশা আজ দশবছর হোলো আগরওয়াল ওর গাড়ির নম্বর 3667 আর ব্রায়ের পাটীগণিত 36... কখনো মুখার্জী ছিলো ফেসবুকে অবশ্য আজও মুখার্জী ও নইলে চিনতে অসুবিধে হতো আমার অফিসের গেটের বাইরে, রাস্তার ওপাশে, ক্রিমরঙা সেডান গাড়িটা... 3667... দাঁড়িয়ে থাকার কথা গুলিয়ে যাওয়ার কথা বাড়ি ফেরার রাস্তা আজ আরেকবার হাতের তালুতে ফুটে ওঠার কথা ছত্রিশ ব্যাঞ্জন আর ব্যাঞ্জনা এদিকে অপর্ণা গ্যাছে তার বাপের বাড়ি আর ও বাপের বাড়ি গেলেই আমার যথেষ্ট নৈটিক অধঃপতন ঘটে আর ঘটতেই থাকে আজ্ঞে নেট + ষ্ণিক প্রত্যয় আর কি তারপরেও আমি মনে মনে ফুঁ দিই ঘুমন্ত অপর্ণার চোখের পাতায় দেখি কীভাবে গাঢ় হয়ে আসে বিকেলের রিভার্স মন্তাজ ভারী হয়ে আসছে গুঁড়ো গুঁড়ো বসন্ত যেকোনো আয়নার পারদেই অনেকটা ব্যাক্তিগত হাফনোট ধরা আছে বুঝি আজকাল যখন ছটা নাগাদ লাল অফিসবাড়িটা থেকে দলে দলে ছুটিপাওয়া লোকগুলো মেয়েরা বেরোতে থাকে একতলার গেট দিয়ে আর ঠিক ওই সময়টাতেই পার্কিং লটের ঝাঁকড়া গাছগুলোতে প্রচুর কাক বাসায় ফিরতে থাকে... হাহ, রিভার্স মন্তাজ মাইরি সবেতেই মেলোড্রামা নঁসি থেকে আর্যনীল দা বহুদিন ফোন করেনি, মেইলও... শেষ মেইলে লিখেছিলো, নো কিন্তু নীলাব্জ আবেগ আর্ট-কে নষ্ট করে কবিতা আর জীবন থেকে সমস্ত আবেগ ঝেড়ে ফেলতে হয় নো মেলোড্রামা...
এবার আমি একটু থমকে গেলাম গেটের বাইরে রাস্তার ওপারে পরপর দু-তিনটে সেদান গাড়ি... ক্রিমরঙা... আররে... কোনটারই তো নম্বর দেখা যাচ্ছে না... কি জ্বালা রে... কোনটা বিদিশার ? ট্যাক্সির মতো সব গাড়িতেই সাইডে নম্বর লেখার ব্যবস্থা নেই ক্যানো? প্রথম দিন তো দুপুরবেলা এসেছিলো আর কোনও গাড়ি ছিলো না তখন চুপচাপ উঠে গেছিলাম দরজা খুলে হাত অল্প কাঁপছে টের পেয়েছিলাম একটু পরে ওর হাতে তাড়া তাড়া চিঠি অয়নের কথা সরছিলো না আমার বিদিশাও অল্প কাঁপছে বললো, নীলু, তোমার সাথে সত্যি দেখা হোলো আমার! সেই নীলাব্জ! জানো, তোমার বন্ধুর প্রত্যেক চিঠিতে তোমার কথা থাকতো তুমি ছোটবেলায় জলপাইগুড়িতে থাকতে, তোমার থার্ড ইয়ারে একবার জন্ডিস হয়েছিলো, তোমার ঠাকুমা ২০০০ সালে মারা যান, তুমি টুইঙ্কল খান্নার বিশাল ফ্যান ছিলে... এইসব পাঁচমিশালী ডেটার সামনে এসে একটু ঘাবড়ে যেতেই হয় আমাকে... ও তখনো বলে যাচ্ছে তুমি ওর কতো কাছের বন্ধু ছিলে নীলু... তোমার মনে আছে আমরা একবার ফোনে কথা বলেছিলাম ? ওকে বললাম, তুমি যে এভাবে আমার সাথে দ্যাখা করতে এসেছো তোমার বর জানে ? ফিল্মি বিদিশা বললো, করণ আগরওয়াল আমার হাজব্যান্ড বর নয় নীলু আমি বললাম, করণ জানে ? দ্যাখো বিদিশা, তুমি করণ আগরওয়ালের বউ শিল্পপতি পরিবারের বড়োছেলের বউ ইফ এনিথিং গোজ রং উইথ ইয়ু... আই অ্যাম এ ডেড ম্যান... আর বলতে দেয় না বিদিশা... উফ, কেন বারবার বর বউ এই টার্মগুলো ব্যাবহার করছো নীলু ? আমার আর বউ হওয়া হয়নি কারো... আমি করণের ওয়াইফ বলো ওয়াইফ বিবি বলো বিবি... কিন্তু প্লিস বউ শব্দটা বোলোনা নীলু...

মিনিট ত্রিশ পরে অফিসের সাততলায় আমার টেবিলে ফিরে যাই... ঘন হয়ে আসে চারপাশের বাতাস...

সমস্ত ক্যালেন্ডার থেকে
উড়িয়ে        দেওয়া হোলো
দু-তিন লাইন অভ্রকুচি আর অ্যাসাইলামের রঙ
যেভাবে একটি পোষা
নগ্নতার পায়ের কাছে
ফিরে গেছে দুপুরের বোতামবেলা

এইসব শীতকালীন খাম
চিঠি নয়
চিঠির ভেতর দিয়ে
দরজা খুলে ফেলছে মেলোডির পাতাগুলো
এইখানে সেলুলয়েড ফিরে যাচ্ছে
কবিতার অন্য অর্ধেক থেকে
আপেল গড়িয়ে যাওয়া
চশমার ভেতরে ঢুকে       একদিন দেখা হোলো
কাঁচবন্ধ গাড়ির আয়নায় পাতাঝরার গন্ধ লেগে থাকা...


পরেরদিন আবার ও এলো... তার পরেরদিন আবার... ওকে বললাম, আই ওয়ান্ট ইউ টু ফল ফর মি বিদিশা ও তো ফিল্মি বললো, ক্যানো, তোমারও একটা মীরা চাই বুঝি ? বললাম, না এটা আসলে আমার একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হয়ে যাচ্ছে তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাও অয়নের জন্য আমিটা কে তাহলে ? কে নীলু ? এখানে নীলু নামের কেউ নেই ? তুমি ওই চিঠিগুলোর সময়ে আটকে থাকতে চাও আসলে ওই ১২-১৪ বছর আগেই এখনো আটকে আছে তোমার সময় তুমি অয়নের জন্যই আমায় খুঁজে বার করেছ আমি কেউ না ব্যস আর যোগাযোগ করবে না আমার সাথে আমার পক্ষে কিছুতেই ওর ফোন নম্বর বা অফিসের ঠিকানা দেওয়া সম্ভব না তুমি যাও বিদিশা... আর এসো না ক্যানো বুঝতে পারছনা...
আমরা কেউই তখনও জানতাম না কিছুদিন পরেই ও আমায় বলবে... নীলু, তোমার বন্ধু তো আর কোনদিন আমায় ফোন করবে না... যদি করতো... ওকে বলে দিতে পারতাম... ওকে খুঁজতে গিয়ে আমি আরো অনেক দামী জিনিস খুঁজে পেয়ে গেছি...
নীলু, তুমি কোনদিন...
আমি যে অপর্ণাকে বড্ড ভালবাসি বিদিশা...

মেনে নিতে হবে ? বিদিশা নামের গানটা আমার গাইবার জন্য লেখা হয়নি... সুর দেওয়া হয়নি...

হম জিসে গুনগুনাহ নহি সকতে / ওয়ক্ত নে অ্যায়সা গীত কিঁউ গায়া...

-   বাবা, বাবা, এটা কি কিশোরকুমারের গান ?
-   না রে ভ্যানো
-   কিশোরকুমারের একটা গান গাও না বাবা...



দৃশ্য  --- এক
সময় --- দিন
স্থান  --- উত্তর কলকাতার রাস্তা

লং শট
    ক্যামেরা রাস্তার দৃশ্য নিচ্ছে বাস-ট্যাক্সি-ট্রাম-পাবলিক... এইসব... পায়রা পিছলে যাবে এমনি হয়েছে আকাশ রোদ এমন যে কাগজে ছাপানো যায় লোকজন যাতায়াত করছে... কোথাও কোনও দেওয়ালে লেখা নেই চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান

ক্যামেরা জুম-ইন করে
দেখা যায় দুই যুবক কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে

মিড ক্লোজআপ
অয়ন --- বাইশে শ্রাবণ একটা সিনেমা ? ওটা কী হয়েছে ? ওটা মার্ডার মিস্ট্রি ?
নীলাব্জ --- আরে বলিস না আমার অফিসের একটা ছেলে দেখে এসে বিশাল উত্তেজিত বলে আপনার দারুণ ভালো লাগবে... কবিতা দিয়ে সিনেমা... আমি দেখে তো অবাক... বাবরের আমলের কিছু কবির নাম কিছু কবিতা ঢুকিয়ে দিলেই হয়ে গ্যালো ? যা-তা ...
অয়ন --- এক্কেবারে বাজে পাঁচ-সাত মিনিটের বেশী দ্যাখাই যায় না
নীলাব্জ --- শুধু ওই গানটার পিকচারাইজেশন... ওহ... খুব ভালো... ব্যাপক...
অয়ন --- কোনটা বলতো ?
নীলাব্জ --- ওই যে, নায়ক দরজা খুলতেই একটা মাঠের সিন তারপর দৌড়চ্ছে... একটা রাস্তা... মস্তবড়ো
গেট... তারপর সেই দ্যাখাচ্ছে ওর বস রাস্তায় একটা চেয়ার পেতে দাবার বোর্ড নিয়ে বসে আছে ওর জন্য...

ক্যামেরা প্যান করে একটা ট্রামকে দ্যাখায় থেমে আছে লাইনে একটা কাঠের চেয়ার পাতা ট্রামের জানলায় এক প্রৌঢ়ের মুখ ঘুমন্ত খোঁচা খোঁচা দাড়ি হাঁ মুখ

দৃশ্য  --- দুই
সময় --- দিন

একটা সিনেমা হল ভেঙে ফ্যালা হচ্ছে
ক্যামেরা প্রথমে সেই সিনেমা হলের নীচের তলার দিকটা দ্যাখায়
তারপর টিল্ট আপ করে

শব্দ কংক্রিট স্ট্রাকচার ভেঙে ফ্যালার একঘেয়ে

নীলাব্জ --- প্রিয় মরফিন নামের একটা সিনেমা দেখলাম জানিস...
অয়ন --- সেটা আবার কী সিনেমা ?
নীলাব্জ --- পরিচিত এক কবি বানিয়েছে... অদ্ভুত একটা সিনেমা... মূলতঃ কবিরাই অভিনয় করেছে... অনেকটা আড়ষ্টতা আছে... কিন্তু দারুণ সুন্দর একটা পোয়েটিক নির্মাণ...
অয়ন --- দিস তো ডিভিডি আছে ? দেখবো...

শব্দ কংক্রিট স্ট্রাকচার ভেঙে ফ্যালার একঘেয়ে

69Th pOsT : প্রথম পর্ব



-     ছাড়ো তো বাল! জানা আছে! উপন্যাস লিখবে, ফিলিম বানাবে, সব করবে তুমি... ক্যানো ফালতু এসবের মধ্যে জড়াচ্ছো নীলু? তুমি মনে করো তুমি সত্যিই পারবে একটা উপন্যাস লিখতে? একটাও ঠিকঠাক চরিত্র আঁকতে জানো তুমি?

-     না, বিশ্বদা, ব্যাপারটা একটু বোঝো... মানে আমার কোনো উপায় ছিলো না...

-     আবার তোমার বালের কথা... যাকগে... আমি মরছি আমার নিজের জ্বালায়...

-     জানো বিশ্বদা, যে কোনো জায়গা থেকেই শুরু হতে পারে একটা উপন্যাস...


প্রাচীন শব্দগুলো
উল্কি ও খুব ক্রুশকাঠে
গলে যাচ্ছে  প্রিয় ঋতু ও ঋতুহনন
পাতাদের আসবাবে    বিবর্জিত ক্রিয়াপদে
এই দিকচিহ্ন এই ছুটে যাওয়া মনক্যামন
স্মৃতিহীন হয়ে পড়ছে...


ফিরে এসে দেখি, সারা ঘরে টুকরো টুকরো হয়ে আছে নীল অথচ এরকম কথা ছিলো না এই তো, কিছু আগেই খুব কায়দা করে ঘাড়টা একটু কাত করে ঋষিদার ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গ্রিলে একটা হাত রেখে ওকে বলে এলাম, ঘুরে দাঁড়ানোই যায় গো ঋষিদা, ইচ্ছে করলেই... কতো আর বয়স তোমার? ঋষিদা বললো, জানিস, ও আমার জীবনের সাত-সাতটা বছর... জানিস, আমি তখন টেনেটুনে ছত্রিশ... ছত্রিশটা একটা বয়স? বল? আর পারছিনা জানিস... প্রতিদিন ভোররাত থেকে বিছানায় উঠে বসে থাকি একা একা একা একা... রোজ রোজ রোজ... দেওয়ালগুলো না, কাছে এগিয়ে আসে, জানিস? মাঝে মাঝে ভাবি, আমি এই একতলার একা ফ্ল্যাটে যদি মরে পড়ে থাকি... আমি বললাম, কিন্তু তুমি তো অনেক অনেক মেয়ের সঙ্গে... কথাটা ও শেষ করতে দেয়নি বলেছিলো, বাড়ি যা নীলু... তোর বৌ তোর ভ্যানোপ্রসাদ ওয়েট করছে, অনেক রাত হোলো... তারপর নিজের হ্যালানো চোখদুটো আরেকবার দাঁড় করাতে করাতে বললো, কুমারী মেয়েদের ক্ষেত্রে তুই তো নাভি পর্যন্ত গেছিস, তার নীচে তো আর কখনো নামতে পারিস নি ওদের শরীরে...

দেখছিলাম কীভাবে এই শহর মিশিয়ে ফেলছিলো সুদীপ্ত সেন আর আইপিএল মিডিয়া আর জনগণের, নাকি জনগণ আর মিডিয়ার, আপাতত এই দুটোমাইলফলক অজান্তেই অথবা ঘোর সজ্ঞানে? আর প্রায় তখনি ভ্যানোপ্রসাদ বললো, বাবা, ওই দ্যাখো, একটা হাট্টিমাটিম গাছ যেকোনো লোকাসের আনাচেকানাচে এভাবেই একটা-আধটা মাইলফলক বসিয়ে রাখে ও, সবে পাঁচ হাহ, সেই যে, একটা গাছের থেকে আরেকটা গাছের দূরত্ব... আমরা বাড়াই কমাই প্রতিদিন আমি আর ভ্যানো আমার মেয়ে সবে পাঁচ


“সমস্ত শীতকাল তুমি পাখি হয়ে পাখির ভিতর কাটালে”

১২/১২/২০০০
দুপুর তিনটে
হায়দরাবাদ


বিদিশা,   

আজ অনেকদিন বাদে তোকে লিখতে বসেছি আজকাল চিঠি লেখা হয় না কখন লিখবো বুঝি না সোম রবি সপ্তাহে ৭ দিন অফিসে আসি কাজ যে খুব তা নয়, কিন্তু চলে আসি বাড়ি থেকে ফেরার পর শনি রবিবার C++ শিখতে যাওয়া শুরু করেছিশেখার চেয়ে বড়ো কথা অফিসের পয়সায় কোর্সটা হয়, এটাই শনিবার সন্ধ্যে জুড়ে আর রবিবার সকাল রবিবার বিকেলে আবার অফিসে চলে আসি সময় যে একদম পাই না তা নয়, আসলে যখন পাই, আর লিখতে ইচ্ছে করে না তোর খান তিনেক চিঠি এসেছে একটা করে আসে আর ভাবি এবার লিখবো কি জানি কিছুই করা হয়ে ওঠে না আর লিখবোটাই বা কী ? পড়াশুনো কর, শরীরের যত্ন নে এছাড়া তোকে আমার কিছুই বলার নেই মা-বাবার কথা শুনিস আর কিছুই না ঘুরতে যাচ্ছিস - আরো যাওয়ার সুযোগ আসবে খুব মজাইস, আমি যদি এরকম একটা course করতে পারতাম অবশ্য আমার সেরকম সুযোগই ছিল না সাবধানে ঘুরিস এতো স্বাধীনতা পাস সেটাকে অপব্যবহার করিস না জন্মদিন উপলক্ষ্যে তোর পাঠানো কার্ডটা পেয়েছি সেটা খুললে আবার গান-বাজনা হয় তোকে এই জ্ঞানগুলো এত দেওয়ার দরকার নেই জানি তুই বড়োও হয়েছিস বুঝি তাও দিয়ে দিই আর কিছু তো দেওয়ার নেই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এরা তেমন important নয় এগুলো ভুল কথা আত্মীয়স্বজনেরা শুভাকাঙ্ক্ষী আমি খুব মিশতে পারিনি এখন মনে হয় ভুল হয়ে গেছে এই আত্মীয়স্বজনেরা আছে বলেই মা-বাবা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে তবে তোর বেশ কিছু অকালপক্ব উল্টোপাল্টা বন্ধুবান্ধব আছে তাদের থেকে সাবধান এদের সাথে খুব একটা ঘনিষ্ঠতা বোধহয় ভালো নয় বাড়ি যাবার আগে তোকে জানাই নি আসলে আজকের অয়ন তোর সাথে ফোন নিয়ে অতক্ষণ বকবক করতে পারবে কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে অবাক হচ্ছিস! ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখিস তো একবার আমি কখনোই “wonderful person throughout” নই হতেও চাই না

২০/১২/২০০০
সকাল সাড়ে সাতটা
হায়দরাবাদ

এক সপ্তাহের বেশী gap পড়ে গেল অবশ্য মাঝখানে Postal strike চলায় লিখলেও লাভ হত না এবার চিঠিটা বড্ড দেরী হয়ে গেল আসলে আজকাল কাগজ পেন নিয়ে বসা হয়ে ওঠে নাএখান থেকে একে একে সকলেই চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরি করতে যাচ্ছে আমাদের সাথে join করা অনেকেই ছেড়ে দিল ছেড়ে দিয়েও শান্তি নেই, অন্যান্য company গুলো টাকাপয়সা ভালো দেয় বাইরেও পাঠায়, তবে কাজের এমন চাপ... অবশ্য এখানেই বা কী করছি কী করা উচিত বুঝতে পারি না এক এক সময় এক এক রকম mood হয় এক বাঙালী দাদা resign করেছে আমাদের group থেকে আমার এক বন্ধু ভুবনেশ্বর থেকে এখানে কয়েকমাসের জন্য transfer হয়ে এসেছিলো সে কলকাতায় চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছে আর নীলু চাকরি খুইয়ে কলকাতায় ফিরে গেছে কিছুদিন আগে কিছু বলার নেই classmateদের মধ্যে যারা দেশে বিদেশে লেখাপড়া করছে তারা ভাগ্যবান আর ফিরে যাওয়া যাবে না আফশোস করে লাভ নেই আমিও অনেক বদলে গেছি সবাই যায় ? কি জানি বেশী কথা বলার অভ্যেস চলে গেছে তুই phone-এ যা বললি শুনলাম এগুলো আমি চাই নি লজ্জা লাগলো খুব কোনো উত্তরই দিতে পারলাম না এখানে মেয়েদের সাথে interaction NIL হয়ে গেছে তোর সাথে বকবক করতেও পারবো না অভ্যেস চলে গেছে নিজেকে, মা-বাবাকে, আত্মীয়স্বজনদের সময় দে আমার জ্ঞানগুলো তোর ভালোর জন্যই ভালো কথা, জানিস, আজকাল চিঠি পাইও খুব কম নীলু তো এতদিন এখানেই ছিল, চিঠির ব্যাপার ছিল না... আর মা-বাবাকে ছেড়ে থাকা রপ্ত করে ফেলেছি বাকিগুলো তো খুব সোজা বাবা বোধহয় ছেলের career উদাসীনতা নিয়ে চিন্তিত কিছু একটা ভাবতেই হবে গতসপ্তাহে আমার ছোটবেলার একজন বন্ধু আর college-এর এক বন্ধু বিদেশ চলে গেলো হঠাৎ করে মা-বাবা নিশ্চয়ই এসব নিয়েও ভাবে খুব দিশেহারা অবস্থার মধ্যে আছি খুব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে চিঠি শেষ করি এবার ভালো থাকিস তোর ওপর কোন রাগ নেই আমার আমার রাগ হয় নিজের ওপর চেষ্টা করব চিঠি লেখার তবে নিয়মরক্ষার মতো অত লিখতে পারব না তুই লিখিস একটাই অনুরোধ শরীরের যত্ন নিস ভালো থাকিস হাঁটুর বয়সী হলেও তোর চাইতে অনেক ছোট আমি মানুষ হিসেবে বুঝলাম চিঠি লিখবো


অয়ন ব্যানার্জী