৯
“রোদের দাগ উঠে গেলে আমি
ঘাসে ঘাসে আতসকাঁচ ফেলি/ হাইলাইটার টেনে দিই তার প্রতিটি সবুজ পঙক্তিতে...”
০২/১০/১৯৯৯
বেলঘরিয়া
অয়ন,
ক্যামোন আছিস তুই? অনেকদিন
চিঠি পাইনি কিন্তু। সেই সেপ্টেম্বরের শুরুতে শেষবার। by the way, হায়দরাবাদে
কী এখন শরৎকাল? ওখানে শরৎকাল ঠিক কীরকম হয় আমি জানিনা... বোধহয় জানার কথাও না। এখানে ভরপুর শরৎ শরৎ ভাব। ওহ, তুই সত্যিই পুজোর সময় আসবিনা কলকাতায়! একটুও
ছুটি পাবিনা! ধুর... যাকগে, এনিয়ে আর কথা বলবোনা... ভালো লাগছে না। তোরও নিশ্চয়ই...
মাঝখানে
কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টিতে বাড়িতে জল উঠে একেবারে যাতা অবস্থা হোলো। জানিসই তো আমাদের ওইখানটায় যাতায়াতের কীরকম অসুবিধা
হয়। ওইসময় সাত-আটদিন
বাগবাজারে মামাবাড়ি থেকে অফিস যাতায়াত করলাম। ন‘টা একের ট্রেনের
বদলে metro, auto – একেবারে নাগরিক
জীবনযাপন যাকে বলে। হাহ্, ভাব একবার... কালীঘাট স্টেশনে নেমে সকালবেলার মসৃণ ফুটপাথে কয়েক পা
হেঁটে একটা auto-র সামনে গিয়ে গম্ভীরভাবে “গড়িয়াহাট?” বলার মধ্যে একটা বেশ কেত-কেত ব্যাপার আছে
না? তোকে পড়িয়েছিলাম? ঠিক মনে নেই... তারাপদ রায়ের এই কবিতাটা? যেদিন যেদিন ঐভাবে
অফিস যাই সকালে এটা মনে পড়ে...
লেট সিটি এডিশন
সকালবেলা টেলিভিশনে বন্ধুদের কবিতা পাঠ
দেখতে দেখতে আমার খুব দেরি হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি ব্যাগ হাতে হাজরায় ছুটে গিয়ে এসকেলেটরের ধাপে ধাপে ত্রিশ ফুট মসৃণ
নেমে যাই। আগের টিউবট্রেন সাত মিনিট হোলো চলে গেছে, পরের আসতে আট মিনিট বাকি। কলকাতার শেষ গৃহহীন গৃহস্থকে ফ্ল্যাট
দেওয়ার অনুষ্ঠান আজ মহাকরণে, আমার কি অফিস পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে? তবুও আট মিনিট
সময় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্টেশনের কুশনগদিতে বসে নরম আলোয় এখন আমার হাতে একবার
অতিদ্রুত চোখ বুলিয়ে নেওয়ার আট মিনিট সময়; আমার ব্যাগের ভিতর থেকে বার করে আনি
সকালের টাটকা দৈনিক কৃত্তিবাসের লেট সিটি এডিশন।
হ্যাঁ, উনি “শীততাপ”-ই লিখেছেন দেখলাম। অথবা কে জানে ছাপার ভুল কি না... মোদ্দা কথা আসলে
দুটো। একটা হোলো ওটাকে আর “শীতাতপ” করলাম না। আরেকটা হোলো, ভেবে দ্যাখ, দৈনিক(!) কৃত্তিবাসের লেট
সিটি এডিশন (!)। যাকগে... আসলে ঐ যে বললাম, সকাল সকাল metro করে
অফিস গেলেই এই কবিতাটা ঢং ঢং করতে থাকে খুব।
আজকাল খুব “মারাসিম”
শুনি। জগজিৎ সিং। তুই
কিনবি বলেছিলি, কিনেছিস? শুনিস... Aankhon mein jwal raahaa hain kiyuN
bujhtaa nahin dhuyaaN… দারুণ রে!
ওহ, মনে পড়লো, সম্প্রতি দু’বার cinema
hall-এ গেছিলাম।
প্রথমবার “বাদশা” দেখতে... আর
দ্বিতীয়বার, ইয়ে, ওই, “বাদশা”
দেখতেই। দু’বার
night show, দু’বার অনন্যা-য়, দু’বার একা, দু’বার হেঁটে বাড়ি ফেরা। প্রথমবার শনিবার, টিউশানির পর... তারপর তার দু’দিন
বাদে আবার... অফিস থেকে ফেরার পথে... ৬টা ১৩-র ডানকুনি লোকাল ধরে। ভালো কথা, ডানকুনি লোকাল যেটা ৬টা ১৫-য় ছিলো, সেটা এখন ৬টা
১৩ হয়ে গ্যাছে। একদিন ৬টা ১৪-য়
গিয়ে পাইনি! যাই হোক, “বাদশা”... আহা,
টুইঙ্কল খান্না! কিশোরকুমারের গলায় ওঁর অসম্ভব ভালো গানগুলো বাদ দিলে ফিল্ম
ইন্ডাস্ট্রিতে রাজেশ খান্না-র সবথেকে বড়ো অবদান সম্ভবত ওঁর বড়মেয়ে টুইঙ্কল! প্রায়ই
মনে হয় আজকাল এ কথাটা। হাসিস
না প্লিস...
সেই কবে ক্লাস ইলেভেনের ভাইফোঁটায় মেজদি “ইচ্ছে হ’ল” দিয়েছিলো, জানিসই তো... ওই সময়টার কথা উঠলেই খালি মনে পড়ে রোজ ক্রিকেট ব্যাট আর ক্যারমবোর্ড... বুধবার সকালে কেমিস্ট্রি পড়তে যাওয়ার আগে বইয়ের মধ্যে কঠিন কঠিন integration-এর অঙ্কগুলো টুকে নিয়ে গিয়ে গিরিবাবুর কেমিস্ট্রি পড়ানো না শুনে ওই অঙ্কগুলো করা... কিশোর-লতার ডুয়েট আর “ইচ্ছে হ’ল”... এই প্রথম চর্মচক্ষে সামনাসামনি দেখলাম সুমন চট্টোপাধ্যায়-কে। আগের চিঠিতে লেখা হয়নি... ১৩ই অগাস্ট কলামন্দিরে গেছিলাম রাজীব দা-র সাথে... কি অসামান্য গাইলেন! এমনকি শ্যামল মিত্রের “তোমারই পথপানে চাহি” অবধি!
এর মধ্যে একদিন কি খেয়াল হোলো, ছোটবেলার
মতো ক্রিকেটের বিশ্ব একাদশ বাছতে বসে গেছিলাম। দাঁড়া, চিরকুটটা হাতের কাছেই আছে। টিম লিস্টটা লিখে পাঠাচ্ছি তোকে। ফিরতি চিঠিতে জানাস, এই টিমে তোর কোনো অদলবদল করার
প্রয়োজন মনে হোলো কি না... যত্তসব পাগলামি আমার... এই টিম কিন্তু শুধু টেস্ট ক্রিকেটের। ওই পঞ্চাশ ওভারের খ্যালাগুলো আমার ঠিক ক্রিকেট বলে
মনে হয় না। এরপর অবশ্য কোনদিন দেখব ২০-২৫ ওভারের ক্রিকেট খ্যালা হচ্ছে আর পাবলিক হাঁ করে
তাই গিলছে... বাণিজ্য হে বাণিজ্য। সবটা আমাদের বোঝার কথা নয় বোধ হয়...
বাসে-ট্রেনে-অফিসে-বাজারে-বিয়েবাড়িতে সবাই
সবসময় ক্রিকেট ক্রিকেট করে চেল্লাবে “দাদা,
অমুকের ছয় মারাটা দেখেছেন? তমুক কীরকম ক্যাচটা নিলো দেখলেন? দ্যাখেননি?” না দেখলে জীবনই বৃথা য্যানো... একটা গোটা জাতি ক্রিকেট নিয়ে আকুলব্যাকুল
হয়ে উঠবে অথচ কেউ লেন হাটন বা নীল হার্ভের নাম জানবে না... গ্যারি সোবার্সের ছবি
দেখে আফ্রিকার কোনও দেশের রাজনৈতিক নেতা ঠাওরাবে... যাকগে, পাবলিক তো minority... কী বলিস?
ওপেন কে করবে-টা কোনও সমস্যাই নয় আমার
কাছে... চিরকালের favourite লেন হাটন আর
গাভাসকার (গাওস্কর?)। ব্যারি রিচার্ডস বা জ্যাক হবসের জন্য খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। তিন নম্বর নিয়েও কখনো কারোর কোনও সমস্যা নেই বলাই
বাহুল্য। শ্রী ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। তারপর একটু ব্যাপার আছে। চার নম্বর। দুটো নামে আটকে যাই... ভিভ রিচার্ডস না তেন্ডুলকার? নাকি দুজনেই? চার আর
পাঁচ? মিডল অর্ডারে আর কাউকে লাগবে না? ট্রাম্পার বা জাহির আব্বাস বা কানহাই বা
ওয়ালি হ্যামন্ড... য্যামন ছয় নম্বরে গ্যারি সোবার্স না কপিলদেব? বথাম বা ইমরান নয়
বোধ হয়... সাতে তো উইকেটকিপার। অ্যালান নট ছাড়া কে-ই বা! কিরমানি? বব টেলর? রডনি মার্শ? নাহ... হানিফ মহম্মদ
হলে অবশ্য ওপেন করতে পারতেন। চারটে জায়গা পড়ে রইলো। প্রথম ৩০০ উইকেট টেকার ট্রুম্যান একদম automatic choice আমার। সাথে ডেনিস লিলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যেকোনো একজন হেঁটে হেঁটে ঢুকবেন। মার্শাল না হোল্ডিং? আমার ভোট মার্শালের দিকে। বব উইলিস বা গ্লেন ম্যাকগ্রাথের জন্য জায়গা থাকবে
না! কি আর করা যাবে? একজন তো স্পিনার রাখা উচিত। এইখানে এসে আমি ঘেঁটে যাই একদম। কতো ফাটাফাটি option
সব! বিল ওরিলি, আর্থার মেইলি, ভেরিটি, আন্ডারউড, ল্যান্স গিবস, কাদির, বেদী,
প্রসন্ন, চন্দ্রশেখর, শেন ওয়ার্ন, জিম লেকার, মুরলীধরন... বাপরে... জায়গা তো মোটে
একখানা। থাকুন বিল ওরিলিই। মোটমাট দলটা কীরকম দাঁড়ালো দ্যাখ।
লেন হাটন
গাভাসকার
ব্র্যাডম্যান
ভিভ রিচার্ডস
তেন্ডুলকার
গ্যারি সোবার্স
অ্যালান নট
ট্রুম্যান
ডেনিস লিলি
ম্যালকম মার্শাল
বিল ওরিলি
দ্বাদশ ব্যাক্তি – আজহারউদ্দিন / জন্টি রোডস
হুমম... বেশ চমৎকার দ্যাখাচ্ছে... অধিনায়ক হতে পারেন অনেকেই। সোবার্স বা গাভাসকার বা ব্র্যাডম্যান। কী বলিস? আজ থেকে ১০-১২ বছর বাদে দল বানাতে বসলে
হয়তো অনেক পাল্টাতে হবে। অনেক নতুন নতুন ক্রিকেটার... ততদিনে...
তোর বিদিশার খবর কী? চিঠিপত্র চলছে নিশ্চয়ই regular? ওকে phone-টোন করিস মাঝেমাঝে? ভালো থাকিস... চিঠি দিস আমায়। তোর শেষ চিঠিতে তোর e-mail address দিয়েছিলি। আমার এখনো কোনও e-mail address নেই। কখনও যদি কোনও account খুলি... প্রথম e-mail-টা তোকেই করব বলাই বাহুল্য।
শেষ কথা --- তিনতলার খুদে ঘরটা হালকা নীল রং করা হয়েছে। ঈষৎ
পরিষ্কার ও বাসযোগ্য দ্যাখায় ইদানীং। পাশের
বাথরুম ও বারান্দাটাও ভালো আছে আগের থেকে একটু।
নীলু