72nD pOsT : চতুর্থ পর্ব



ক্যামোন যাবে আজকের দিনটা? দেখা যাক চারটে খবরের কাগজ কী বলছেদিশী মতে মকর রাশি আর যেহেতু ২৬শে অগাস্ট আমার জন্মদিন, সায়েবি কায়দায় ভার্গো আমি বাই দ্য ওয়ে, এই খবরের কাগজগুলোর নামের তালিকা থেকে, আমার ধারণা, কোনও পরিবারের পলিটিক্যাল ওরিয়েন্টেশন সম্বন্ধে কোনও মতামতে আসা সম্ভব নয়...

আনন্দবাজার পত্রিকা --- মকর রাশি --- আমদানি-রফতানি ব্যবসায় অপ্রত্যাশিত লাভ প্রাপ্য অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা রক্তচাপের হেরফেরে নানান শারীরিক সমস্যা ভোগাবে

এবেলা --- শনি (কোনও মাসের ৮, ১৭, ২৬ তারিখ যদি জন্মদিন হয়) --- মোটের ওপর দিনটা ভালই কাটবে পছন্দের কোনও কাজ করতে পারেন কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান মনের কথাগুলো মনেই বন্দি করে না রেখে সঙ্গীকে বলে ফেলুন কর্মক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা করুন

এই সময় --- ভার্গো --- শুভ দিন নয় ব্যবসায় কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে পারেন পাওনা সব আদায় হবে না প্রতারণার শিকার হতে পারেন প্রেমে বিতর্ক এড়িয়ে চলুন

The Telegraph t2 --- VIRGO --- Do stay calm Don’t create misunderstandings Expect to think about love and marriage.

ভাবা যায়? কতো রকম পরস্পরবিরোধী সম্ভাব্য ও প্রতিসম্ভাব্যর মধ্যে দিয়ে এক একটা দিন শুরু হয় সবার...

আজ সকাল সকাল অফিস পৌঁছে গেছি চারদিকে ঝকঝক করছে আটটা পঞ্চান্ন-র লগ ইন হাহ, আরও চার-পাঁচ মিনিট সময় হাতে ছিলো তার মানে ভাবছিলাম, পৃথিবীর সবকিছুই যদি লিনিয়ার নিয়মকানুন মেনে চলত তাহলে আজ আরও চার-পাঁচ মিনিট বেশী ঘুমোতে পারতাম যদি কফি খেতাম তাহলে হয়তো ভাবতাম, কফিমগে মিশে যেত আরও একটু আন্তরিক চিনি তখনো পর্যন্ত জানিনা, একটু বাদেই পরপর থমথমে খবরগুলো আসতে শুরু করবে একে একে লিফটের লম্বা লাইন কারা যেন নীচুস্বরে মারোয়াড়ীদের গালাগাল করছে শালাদের জাতটাই খারাপ গুজ্জুরা বোধ হয় একটু বেটার মাউড়াদের থেকে কী বলেন? অ্যাঁ? কতো জানে মাইরী পাবলিক... এবং প্রত্যুত্তরে যা বলেছেন... মাউড়ারা বহুত ঢ্যামনা জাত... এতদূর... গা জ্বলে যেতে থাকে আমার হাত নিশপিশ করে লোকগুলোকে চেঁচিয়ে খিস্তি দিতে ইচ্ছে করে ওদের মাথা ঠুকে দেওয়া যায় না? দেখলাম কোনোটাই আমার দ্বারা হওয়ার নয় আমি বড়োজোর লিফটের লাইন থেকে বেরিয়ে যেতে পারি বড়োজোর একা হেঁটে হেঁটে... সাততলা... বেলা বাড়তে না বাড়তেই প্রথম খবরটা পেলাম... খুব সম্ভবত সামনের মাস থেকে আমাদের মাইনে কমে যাচ্ছে... আস্তে আস্তে নানারকম হইচই এমনিতেই এই বছর কারো ইনক্রিমেন্ট হয়নি... প্রতি মাসে ১ বা ২ তারিখের জায়গায় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাইনে হচ্ছে... তার ওপর এই খবর! সিঁড়িতে, লিফটে, টয়লেটে, প্যান্ট্রিতে... সর্বত্র একই আলোচনা... এবা যদি আমাদের মাইনেতে কোপ পড়ে... হয়তো তার পরের মাস থেকে লোক ছাঁটাই শুরু হবে... থমথমে...
            আর একটা খবর এলো বিকেলের দিকে প্যান্ট্রিতে জল ভরতে গেছি, একজন ডেকে বললো, নীলাব্জদা, আপনার পুরনো কোম্পানির খবর পেয়েছেন? কী খবর গো? জিজ্ঞেস করতেই হোলো শুনলাম ওখানেও টুকটাক নানারকম ডামাডোল শুরু হয়ে গ্যাছে নানা খবর ভাসছে বাতাসে কেউ বললো ওখানে অর্ধেক মাইনে হচ্ছে আবার কেউ বললো ওয়ান-থার্ড! ছোট অফিস ওটা শুনলাম কর্মচারীদের নতুন চাকরী খুঁজে নিতে বলে দিয়েছে ম্যানেজমেন্ট আমার পুরনো অফিস প্রায় সাড়ে চার বছর ছিলাম ওখানে কতো স্মৃতি...

- নীলাব্জদা, আপনি যেন কতো টাকা পান এখনো ওদের থেকে?

- আর বোলোনা... সেই চেন্নাই ট্যুরের টাকা, এল.টি.এ, মেডিক্যাল বিল... সব মিলিয়ে প্রায় হাজার ষাটেক... তাও তো নোটিস পিরিয়ডের সময় পাঁচ দিন শর্ট ছিলো বলে পুরো এক মাসের বেসিক কেটে নিয়েছিল...

- ঐ টাকার আশা ছাড়ুন এবার অনেকদিন তো হোল চাকরী ছেড়েছেন এক পয়সাও পেয়েছেন আর? পাবেন মনে করেন ঐ ষাট হাজার টাকা?

- নাহ, শুধু মাস দুয়েক বাদে কয়েকবার তাগাদা দেওয়ার পর মেডিক্লেম ইনসিওরেন্সের ছ-সাত হাজার টাকা দিয়েছিল তাও প্রায় দেড় বছর আগের কথা... কিন্তু আর কিছু পাব না বলছো? আশা ছেড়ে দেবো একেবারে? অতগুলো টাকা... ওঁরা তো কথায় কথায় বলতেন, আমরা কী অসৎ? আমরা কারোর এক পয়সাও মারব না কোনদিন... পাওনা টাকা সব পেয়ে যাবে সবাই...

- যা পেয়েছেন পেয়েছেন ব্যাস ভুলে যান আর একটি পয়সাও উদ্ধার করতে পারবেন না ঐ কোম্পানির ঘর থেকে...

ফ্ল্যাশব্যাক মানেই কিন্তু সাদাকালো নয় চেন্নাই ট্যুরের কথায় আমি দেখতে পেলাম তন্ময় আর অরিন্দমকে ঐ আটত্রিশ দিনে যারা সত্যি সত্যি খুব কাছের মানুষ হয়ে গেছিল... রাত বারোটার সময় হোটেলরুমের দরজায় ঠকঠক করে জন্মদিনের সারপ্রাইজ কেক... জীবনে প্রথম কেক কাটার জন্য চৌত্রিশ বছর... মনে পড়লো ২৭০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে এগমোর স্টেশনের কাছে অন্নপূর্ণা হোটেলে ২৫ টাকায় জোড়া হাঁসের ডিমকষা আর ভাত খেতে যাওয়ার কথা... প্রায় রোজ রাত একটা সওয়া একটা অবধি হোটেলের সামনে পায়চারী করতে করতে আড্ডা দেওয়া তিনজন মিলে... আর ভেসে উঠলো একটা মুখ... টানা টানা চোখ... রুক্মিণী নাম দিয়েছিলাম আমরা... আসল নাম জানিনা আজও... আর কখনো জানাও হবে না...


অথচ বুনে চলার কথা এক বাক্সবাড়ি
সারারাত ফুরলো না
রিস্টার্ট
শীতপাতায়
মোড়ক খুলে সহাস্য আদরের ঝরে যাওয়া দেখি
ভাবো বেজে ওঠাগুলো
আমাদের সাজানো বইতাকে তেমনই
নিবিষ্টতা লেগে রইলো
সবার গোধূলিতে
আঁটা একইরকমের হেমন্ত
কেউ কেউ জল ও জোছনায়
হাইফেন
যেমন-কে-তেমন
পড়ে আছে     ভাল্লুভার সলাই
হিবিস্কাস ও মধু বিষয়ক প্রতিরক্ষায়
খনি খালি করে
ক্যানারি ও শ্রমিকেরা    ফিরে গ্যালো
      উপত্যকার দিক থেকে হাওয়াকল
ভিজে ভিজে কুপন
দেখি          আজও তার চুল ওড়ে কি না
দেখি          আজও ক্যান্টিনের রাস্তায় হ্যালো...

যাপন থেকে একটা-দুটো আ-কার ই-কার ফেলে যাচ্ছি বাহুল্য ফ্ল্যাশব্যাক নাভি ও রেখায় বিদ্যুৎ কোথাও শেষ পাতায় রো-হাউসের লতা সেই দৃশ্যে রিটেক হোলোনা দুধে ও আলতায় ফুরিয়ে যাওয়া একটা কাগুজে সপ্তাহ নিয়ত এই ওঠাবসার গায়ে ঠোনা পড়ছে তিথির পুরোটাই রিওয়াইন্ড করা বরং নবাবসাহেবের ফেলে আসা জুতোয় কিং সাহেবের ঘাট খরগোশ ও রুক্মিণী এইবার ঘাট হোলো রুক তোর মিনি তোর স্কার্ট তোমার জানলায় এসে বসছে আমার খড়খড়ি

সেই চেন্নাই সিরিজ... সেই চেন্নাই... হিসেব করে দেখেছিলাম আমার ৩৬৫০০, তন্ময় আর অরিন্দম একেকজন প্রায় ২০০০০ করে... পাওয়ার কথা ছিলো ঐ আটত্রিশ দিনের জন্য... আমাদের পরের মাসেই দিয়ে দেওয়া হবে এরকম কথা ছিল... হাহ... প্রায় দুবছর...

আরো একটা আফসোস, রুক্মিণী কখনও মিনিস্কার্টে অফিস আসেনি...

ফ্ল্যাশব্যাক মানেই কিন্তু সাদাকালো নয়

                                 
                                  
--- হ্যালো, কে নবৌদি? হ্যাঁ, দুদিন একটু ঘুরে এলাম... না না ওখানে বৃষ্টি পাইনি একদম... হ্যাঁ... বাচ্চাটা খুব হইচই আনন্দ করেছে সবাই আনন্দ করেছে... আমার? আমারও ভালোই লেগেছে... কি জানি... মনটা একদম ভালো লাগে না গো... সবসময় নানারকম চিন্তা হয়... ভাবি আমার জন্য সবার ক্ষতি হয়েছে আমি সবকিছুর জন্য দায়ী... কানে নানারকম উল্টোপাল্টা কথা শুনতে পাই গো বৌদি... কিছুই করতে পারিনা... নানারকম চিন্তা হয়... বসে থাকি তো বসেই থাকি শুয়ে থাকি তো শুয়েই থাকি... কিছুই ভালো লাগেনা... ওষুধ? হ্যাঁ ওষুধ খাই তো... খেতে ভালো লাগে না তাও খাই ওষুধ... ডাক্তারও দেখাই তো মাঝে মাঝে... কিছুতেই কিছু হয় না... দুদিন ভালো থাকি তারপর আবার কানে শুনি নানারকম... এ এই বলছে ও ওই বলছে... আমার তো অসুখই নেই কোনও... শুধু কানে শোনা অসুখ আর মন খারাপের অসুখ... কী হবে ওষুধ খেয়ে... ধুর আর খাবোনা ওষুধ... সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে... আমি ষড়যন্ত্রের শিকার... ক্যানো ওষুধ খাবো? কী হয়েছে আমার? মানুষের কিছু একটা অসুখ করে জ্বর হয় পেটখারাপ হয় তবে না লোকে ওষুধ খায়... আমার কী হয়েছে যে আমাকে ওষুধ খেতে হবে সারাজীবন? সবাই রাগ করে আমার ওপর... দিদিও সেদিন ফোনে রাগ করছিলো... বলছিলো, নিশ্চয়ই তুই আবার ওষুধ বন্ধ করেছিস তাই এরকম হচ্ছে... আমার মাথার মধ্যে খালি এক কথা ঘুরপাক খায় নবৌদি... আমার জন্য বোধহয় সবার ক্ষতি হয়েছে... আমার কিছু ভালো লাগে না গো... বারবার ঘুরেফিরে একই জিনিস হচ্ছে... কিছুই করতে পারিনা... ছেলেটাকে ঠিকমতো দেখতে পারিনি এখন নাতনিটাকেও ঠিকমতো দেখতে পারিনা... কাল ওর মা ছিল না... বাচ্চাটা নিজে নিজে চান করলো... নিজে নিজে খেলো... ঠাণ্ডা জলে চান করেছে একা একা... জ্বর হোলো রাতে... আমি কারো কোনও উপকারে লাগিনা বৌদি... ওষুধ না খেলে উল্টোপাল্টা কথা বললে ছেলে রাগ করে... চিৎকার করে... ওর বাবা রাগ করে... চিৎকার করে... বলে, আমি মরে যাওয়ার আগে পেনশনের কাগজ ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দিয়ে যাব... আমার কিছু ভালো লাগেনা বৌদি... আমি কোথাও চলে যাব সব ছেড়েছুড়ে... সবাই বলে সবাই বোঝায় তোমার কিসের অভাব কিসের কষ্ট... সতিই তো... কিসের কষ্ট আমার? কিন্তু আমি যে কিছুতেই মনস্থির করে থাকতে পারিনা বৌদি... আমি ভালো নেই... আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে... ভয় লাগে... সেই বেলগাছিয়ায় মানব দে মুন্সীর হাসপাতাল... না না আর কিছুতেই যাব না আমি... ইঞ্জেকশন নেব না... বারবার ঘুরেফিরে একই জিনিস হচ্ছে... কতবছর হয়ে গ্যালো... তখন ছেলেটার লেখাপড়ার দিকে কিছু নজর দিতে পারিনি... ও আর অয়ন একইসাথে পড়তো... খুব বন্ধু ছিলো দুজন... সেই... অয়নের মা অয়নের লেখাপড়ার দিকে কত নজর দিত সবকিছুর দিকে কত নজর দিত... আর আমার ছেলেটা... আমি কাউকে দেখতে পারিনি গো বৌদি... আমার মাথার মধ্যে কীসব চিন্তা ঘুরপাক খায় খালি... আমি কোনদিন ভালো হতে পারবোনা... অথচ আমার কী অসুখ করেছে সেটাই কেউ জানেনা... ওরা কি আমার মাথায় এবার শক দেবে গো? হ্যালো... হ্যালো... বৌদি... হ্যালো...

(ক্রমশঃ)